শিরকের পরিচয়
শিরক শব্দের অর্থ অংশীদার সাব্যস্ত করা, সহযোগী বানানো, সমকক্ষ বা সমতুল্য করা। ইসলামি পরিভাষায় কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে আল্লাহ তা'আলার সমকক্ষ বা সমতুল্য মনে করাকে শিরক বলে। যে শিরক করে তাকে মুশরিক বলে। আল্লাহ তা'আলার সাদৃশ্য কেউ হতে পারে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'যদি আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে আল্লাহ ব্যতীত বহু ইলাহ থাকতো, তবে উভয়েই খধ্বংস হয়ে যেত'। (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২২)
পবিত্র কুরআনের এ আয়াত আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ। শিরক হলো তাওহিদের বিপরীত। আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং শিরকের ধারণা খণ্ডন করেছেন। যেমন পবিত্র কুরআনে এসেছে
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ
অর্থ: 'বলুন, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়।' (সুরা আল-ইখলাস, আয়াত: ১)
শিরকের প্রকারভেদ
শিরক ৩ প্রকার-
১. আল্লাহর সত্তা ও অন্বিত্বে শিরক করা
যেমন, আল্লাহ তা'আলার পিতা, স্ত্রী এবং সন্তান আছে এই বিশ্বাস করা। এ ধরনের শিরক সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তীকেও জন্ম দেওয়া হয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই'। (সূরা আল-ইখলাস, আয়াত: ৩-৪)
২. ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে শিরক করা
ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা। যেমন, সালাত, সাওম, পশু কুরবানি ইত্যাদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে বা উদ্দেশ্যে করা। এ ধরনের শিরক থেকে বেঁচে থাকা প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ
অর্থ: 'বলুন, আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে।' (সুরা আল-আন' আম, আয়াত: ১৬২)
৩. আল্লাহ তা'আলার নাম ও গুণাবলিতে শিরক
আল্লাহ তা'আলার নাম ও গুণাবলিতে কোনো সৃষ্টিকে তাঁর সমকক্ষ মনে করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সৃষ্টি, জীবিকা, জীবন ও মৃত্যুর মালিক মনে করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'আল্লাহ ব্যতীত কি কোনো সৃষ্টিকর্তা আছে, যে তোমাদেরকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী থেকে রিযিক দান করে?' (সুরা আল-ফাতির, আয়াত: ৩)
একক কাজ শিরক হয়/হতে পারে এমন কাজগুলোর তালিকা তৈরি করো। |
শিরকের পরিণাম ও প্রতিকার
আল্লাহ তা'আলার নিকট সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধ হচ্ছে শিরক। এর পরিণাম ভয়াবহ। পৃথিবীতে যত প্রকার যুলুম আছে শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাপ বা যুলুম। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
إِنَّ الشَّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
অর্থ: 'নিশ্চয়ই শিরক চরম যুলুম।' (সুরা লুকমান, আয়াত: ১৩)
সৃষ্টিকুলের মধ্যে মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি তথা আশরাফুল মাখলুকাত। আল্লাহ তা'আলার সবচেয়ে প্রিয় পাত্র। তাই মানুষ কোনোভাবেই আল্লাহ তা'আলার সাথে শিরক করবে না। কারণ আল্লাহ তা'আলার অফুরন্ত নিয়ামত পেয়েও যারা আল্লাহ তা'আলার সাথে শিরক করে, তাদের প্রতি আল্লাহ তা'আলা খুবই অসন্তুষ্ট হন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু হওয়া সত্ত্বেও শিরকের অপরাধ ক্ষমা করবেন না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন-
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يَشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرْ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ
অর্থ: 'নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করার গুনাহ ক্ষমা করেন না এবং এটা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।' (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮)
আল্লাহ তা'আলা মানুষকে শুধুমাত্র তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাই মহান আল্লাহর জন্য সকল ইবাদাত ও আমল হবে শিরক ও বিদ'আত মুক্ত। শিরক মিশ্রিত যে কোনো আমল ইসলামের দৃষ্টিতে মূল্যহীন এবং আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'তুমি আল্লাহর শরিক স্থির করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং অবশ্যই তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত।' (সুরা যুমার, আয়াত: ৬৫)
আল্লাহ তা'আলা পরম দয়ালু। তাঁর দয়া, রহমত ও ক্ষমা ব্যতীত দুনিয়ার কল্যাণ ও আখিরাতের মুক্তি সম্ভব নয়। পরকালে মুশরিকের জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। জাহান্নামই হবে তার চিরস্থায়ী আবাসস্থল। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'কেউ আল্লাহর সাথে শিরক করলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই নিষিদ্ধ করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। যালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।' (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৭২)
এ প্রসঙ্গে নবি করিম (সা.) বলেন, 'জিবরাইল (আ.) আমার নিকট এসে সুসংবাদ দিলেন যে, আপনার উম্মাতের যে কেউ শিরক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে'। (মুসলিম)
পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বারবার শিরক থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ শিরক হলো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। তাই সকলের কর্তব্য হলো সর্বদা শিরক থেকে বাঁচার জন্য সতর্ক থাকা। কোনোভাবে শিরক হয়ে গেলে পুনরায় বিশুদ্ধ অন্তরে তাওবা করে ইমানের দিকে ফিরে আসা। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের পাপ না করার অঙ্গীকার করা।
আমরা শিরক থেকে বেঁচে থাকতে সচেষ্ট থাকবো এবং এ বিষয়ে মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবো।
প্রতিফলন ডায়েরি লিখন | ||
ক্রমিক | করণীয় | বর্জনীয় |
১ | ||
২ | ||
৩ | ||
৪ |
প্রিয় শিক্ষার্থী, এই অধ্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে তোমরা ইসলামের মৌলিক আকিদা সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছো। তুমি এখন সহজেই অনুমান করতে পারবে তোমার চারপাশের সমাজে এমন কিছু বিশ্বাস ও কাজ হচ্ছে যা ইসলামসম্মত নয়। একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে তোমাকে এ ধরনের বিশ্বাস ও কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত থাকতে হবে। চলো, মুসলিম সমাজে ইসলামি আকিদা পরিপন্থী প্রচলিত বিশ্বাস ও কাজগুলো চিহ্নিত করি। এই কাজে শিক্ষক ও অন্য বন্ধুদের সহায়তা নাও। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্য বা ধর্মীয় জ্ঞানসম্পন্ন গুরুজনদের মতামত নাও।
Read more